কোভিড অতিমারী চলাকালীন গঙ্গাসাগরে কপিল মুনির আশ্রমের পূজা ও প্রসাদ সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ ভক্তের কাছে পৌঁছে দিতে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা প্রশাসনের এক অসামান্য উদ্যোগ ছিল ই - পূজা।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে, যে কোনও ভক্ত ঘরে বসে ই - পূজা ফর্মে নিজের নাম ও গোত্র ফিল আপ করে ১০০ টাকা প্রদানের মাধ্যমে নিজের পূজা দিতে পারে।
কপিল মুনি মন্দিরে পূজা দেওয়ার পর ১০ দিনের মধ্যে ভক্তরা নিজের বাড়িতে ই - পূজা প্যাকেজ পেয়ে যাবেন।
এই বিশেষ ই - পূজা প্যাকেজে মহাপ্রসাদ ও আশীর্বাদী ফুল থাকবে। এই প্যাকেজ গ্রহণের মাধ্যমে যেসব ব্যক্তি মেলায় সশরীরে পৌঁছে পূজা দিতে পারলেন না, তারা ঘরে বসেই সেই আনন্দ অনুভব করতে পারবেন।
পুণ্যতার শত শত বছরের বিশ্বাস গঙ্গাসাগর। এই বিশ্বাসে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ ছুটে আসে গঙ্গাসাগরে। কিন্তু পুণ্যযাত্রার এপথ খুবই কঠিন। বিশেষ করে বয়স্ক, প্রতিবন্দী, শিশু ও মহিলাদের যাত্রাকে দ্বিধাগ্রস্থ করে তোলে এই পথ।
কিন্তু এই সমস্যা আর না, প্রতি বছর সুগম হয়েছে পুণ্যতার এই যাত্রাপথ। দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বয়স্ক, প্রতিবন্দী, শিশু ও মহিলাদের মোক্ষলাভের বিশেষ ব্যবস্থা সাগর ভ্রমণ।
অফলাইন ও অনলাইন দুই-এর মাধ্যমে বুক করা যাবে এই পরিষেবা। সাগর ভ্রমণের পরিষেবা শুরু হবে কলকাতার বাবুঘাট থেকে। যাত্রীদের সমগ্র গঙ্গাসাগর ভ্রমণ করিয়ে যথাস্থানে ফিরিয়ে আনবে সাগর ভ্রমণের পরিষেবা।
ধ্যান হল এক অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অভ্যাস যার মাধ্যমে মানুষ নিজের দৈনন্দিন সমস্যাগুলিকে পিছনে ফেলে নিজস্ব আধ্যাত্মিক চেতনার সাথে সংযোগ স্থাপন করে। গঙ্গাসাগরের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ধ্যানের জন্য আদর্শ।
২০২২, গঙ্গাসাগর মেলায় দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা প্রশাসনের এক অন্যতম নতুন উদ্যোগ ধ্যানকেন্দ্র। সাগরদ্বীপের পবিত্র তটভূমিতে ভক্তদের ধ্যান শিক্ষার ও অভ্যাস করবার সুযোগ করে দিতে প্রশাসন এই বিশেষ উদ্যোগ শুরু করে।
প্রতিটি ধ্যানের অধিবেশন একজন বিশিষ্ট সাধকের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। সেই সাধক নিজের প্রজ্ঞার দ্বারা ভক্তদের অনুপ্রাণিত করেন এবং জ্ঞানের আলোকে নিজেদের আলোকিত করেন।
গঙ্গাসাগর সম্পর্কিত পৌরাণিক কাহিনী ও কিংবদন্তিগুলি সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ ভক্ত জানেন। কিন্তু অধিকাংশ ভক্ত গঙ্গাসাগরে কপিল মুনির মন্দির এবং গঙ্গাসাগর মেলা সম্পর্কিত আশ্চর্য ঐতিহাসিক তথ্যগুলি জানেন না।
সাগর সংগ্রহালয় এক চমৎকার উদ্যোগ যা মেলায় আগত সকল তীর্থযাত্রীদের গঙ্গাসাগরের বিস্ময়কর ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন করে তোলে।
সাগর সংগ্রহলয়ের সময়সীমা
১০ই জানুয়ারী ২০২২ থেকে ১৫ই জানুয়ারী ২০২২
সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা
বিকেল ৩টে থেকে রাত ৮টা
নির্বাণ লাভের পর প্রত্যেক তীর্থযাত্রী যে কোনো তীর্থস্থান থেকে কোনো না কোনো স্মৃতি নিজের কাছে রাখতে চান। সাগর পরিধান, দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ভক্তদের এই ইচ্ছেকে পূরণ করতে ২০২২সালে প্রাঙ্গনে স্থাপন করা হবে একটি স্টল।
সাগর পরিধান স্টলের মাধ্যমে তীর্থযাত্রীরা নিজের ও পরিবারের জন্যে গঙ্গাসাগরের স্মৃতি চিহ্ণ নিজের সাথে নিয়ে যেতে পারবেন। সুতরাং, এই বছর গঙ্গাসাগর মেলায় গেলে অবশ্যই যাবেন সাগর পরিধানে।
মোক্ষের সন্ধানে ভক্তরা প্রতি বছর গঙ্গাসাগরের পবিত্র তীরভূমিতে এসে পৌঁছন। পণ্ডিতদের ছন্দময় স্তোত্র ও ধূপের সুবাসে এক আধ্যাত্মিক শান্তি সূচিত হয়।
প্রশাসন এই বছর সাগরসঙ্গমের তীরে এক বিশেষ সাগর আরতির আয়োজন করেছেন। পণ্ডিতদের বেদমন্ত্র ধ্বনিতে আরতি এক মনোমুগ্ধকর শোভা সৃষ্টি করবে।
গঙ্গাসাগরের তীর্থযাত্রীরা তীরভূমিতে দাঁড়িয়ে এই অসামান্য সাগর আরতি দর্শন করতে পারবেন।
মহাভারতের সুপ্রাচীন শ্লোকগুলিতে উল্লেখ রয়েছে গঙ্গাসাগর তীর্থের। গঙ্গাসাগর তীর্থযাত্রা এক মহান তীর্থযাত্রা যা পুণ্যার্থীদের সংসার থেকে মোক্ষের দিকে এগিয়ে দেয়। গঙ্গাসাগর এমন এক মহান তীর্থস্থান যেখানে মানুষের মধ্যে পার্থক্য অতিক্রম করে এক সাম্যের বিশ্বাস নিয়ে আসে। এই সাম্যের বিশ্বাসকে মাথায় রেখে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা প্রশাসন পশ্চিমবঙ্গের ২৩টি জেলার মধ্যে মিলনের উদযাপন হিসাবে এক নতুন উদ্যোগ শুরু করে যার নাম - পুণ্যতরী।
সাগরসঙ্গমের পবিত্র জল কমণ্ডলুতে ভরে সম্প্রীতিমূলক স্তোস্ত্র পাঠ করে সেই কমণ্ডলুগুলি ২৩টি জেলায় পাঠানো হবে। যার মাধ্যমে রাজ্যের সর্বত্র গঙ্গাসাগরের পবিত্র জল পৌঁছে যাবে এবং সারা রাজ্য সম্প্রীতির এক নতুন সুরে একত্রিত হবে।
নৌকায় করে পবিত্র জলপূর্ণ কমণ্ডলুগুলি পাঠানোর আগে গঙ্গাসাগর মেলাপ্রাঙ্গণে প্রতিটি জেলার আঞ্চলিক লোককাহিনী, পোশাক, সংস্কৃতি ও লোকনৃত্য সুরম্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আগত দর্শকদের কাছে তুলে ধরা হবে।
অসংখ্য শঙ্খধ্বনি এই উৎসবকে এক অসাধারণ মাত্রায় উন্নীত করবে যা বিবিধের মাঝে মহামিলনের বাণী সূচিত করে।
সবতীর্থ বারবার, গঙ্গাসাগর একবার।
পুণ্যতা লাভের আশায় লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাবেশ হয় গঙ্গাসাগর মেলায়।পুণ্যযাত্রার এই পথ কে সুগম করতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নেওয়া হয়েছে নানারকম উদ্যোগা।তীর্থ যাত্রীদের সান্ধ্যকালীন মনোরঞ্জনের জন্যে অপর এক উদ্যোগের নাম সাগরসংগম(টকশো)।
এই উদ্ভাবনী টকশোটির মাধ্যমে পবিত্রগঙ্গাসাগর মেলার পরিচিতি করা হবে তীর্থযাত্রীরা।অনুষ্ঠানে পরিচালক গঙ্গাসাগরের বিশেষ কিছু আকর্ষণীয় তথ্য বর্ণনা করে শো্টি শুরু করবেন।
এই টকশো-তে উপস্থিত থাকবে গঙ্গাসাগর পরিদর্শনে ইচ্ছুক কয়েক জন প্রধান অতিথি।
এছাড়াও সাগরসংগম-এ বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তা সাথে মেলায় উপস্থিত সকল ভক্তদের মধ্যে একটি প্রাণবন্ত কথোপকথন হবে এবং একই বিষয়ে তাদের দৃষ্টি ভঙ্গি জানাবেন।
এই টকশোটির বিভিন্ন ভিডিও সাপ্তাহিক পর্বহিসেবে আপলোড করা হবে গঙ্গাসাগরের ওয়েবসাইটে।
একসময় গঙ্গাসাগর যাত্রা অত্যন্ত কঠিন ও বিপজ্জনক ছিল কিন্তু সময়ের সাথে বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে এই তীর্থযাত্রার কাঠিন্য ক্রমশ কমেছে এবং তীর্থযাত্রীদের পক্ষে কপিল মুনির মন্দিরে পূজা দেওয়া অনেক সহজ হয়েছে। এই বছর জেলা প্রশাসন চালু করল এক নতুন উদ্যোগ - সাগরসঙ্গম। এটি একটি টক শো - যার মাধ্যমে গঙ্গাসাগরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হবে।
মেলা চলাকালীন প্রতি সন্ধ্যায় এই টক শো-তে অনুষ্ঠানের আযোজকরা কিছু আকর্ষণীয় তথ্যের উপর আলোকপাত করবেন এবং প্রধান অতিথি, বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিক ও তীর্থযাত্রীদের সাথে মেলা সম্পর্কে তাদের উপলব্ধি সম্পর্কে আলোচনা করবেন।
এই টক-শো এর মাধ্যমে ভক্তরা মেলাকে আরও সুসংবদ্ধ করে তুলতে জেলা প্রশাসনের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে পারবেন। শুধু তাই নয়, এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুণ্যার্থীরা এই বিশাল বড় মেলার সাফল্যের পিছনে অনলস পরিশ্রম করে চলা সমাজকর্মী ও সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পর্কে জানতে পারবেন।
এই অনুষ্ঠানের প্রতিটি পর্ব অফিসিয়াল গঙ্গাসাগর ওয়েবসাইটে উপলব্ধ থাকবে।