গঙ্গাসাগর

এক অন্তহীন সমুদ্র, এক কালজয়ী কাহিনী

‘সব তীর্থ বারবার, গঙ্গাসাগর একবার’

এগুলি হল সেইসব প্রবাদ বাক্য যা প্রত্যেক সেইসব তীর্থযাত্রীদের হৃদয়ে অমর হয়ে রয়েছে যারা প্রতিবছর মকর সংক্রান্তির পুণ্য লগ্নে গঙ্গাসাগর তীরে পৌঁছবার জন্য প্রায় পুরো দেশ জোড়া দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে। গঙ্গাসাগর তীর্থের আসল সৌন্দর্য লুকিয়ে রয়েছে সেই সব পুণ্যার্থীদের বিশ্বাসে যারা মনে করেন, সাগরসঙ্গমের পবিত্র জলে ডুব দিলে তারা মোক্ষ লাভ করবেন। মেলার আর মাত্র এক মাস বাকি, এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা প্রশাসন সমস্ত কোভিড নির্দেশিকা অনুসরণ করে ব্যতিক্রমী প্রচেষ্টা চালাচ্ছে যাতে তীর্থযাত্রীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিষয়ে কোনও খামতি না থেকে যায় এবং তীর্থযাত্রীরা নিশ্চিন্তে সুরক্ষিত ভাবে নিজেদের ধর্মীয় আচার পালন করতে পারেন।

গঙ্গাসাগর সেই পবিত্র ভূমি যেখানে ভক্তি মিলিত হয় বিশ্বাসের সাথে। এই মহাতীর্থের ভৌগোলিক অবস্থান হল পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা শহর থেকে প্রায় ১০০ কিমি দূরে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার অন্তর্গত গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের দক্ষিণতম প্রান্তে। গঙ্গাসাগর বা সাগরদ্বীপ মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপভূমি যেখানে নীল আকাশ, স্বচ্ছ সমুদ্র, রুপোলি বালুকাবেলার মাঝে মহিমান্বিত কপিল মুনির আশ্রম এক অতুলনীয় নৈসর্গিক সৃষ্টি করে। এই সেই মহান তটরেখা যেখানে পবিত্র গঙ্গা নদী হাজার হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এসে সমুদ্রে মিলিত হয়।

গঙ্গাসাগর, যুগ যুগান্ত ধরে বহন করা এক অমরকাব্য যা ভারতের মহান সংস্কৃতির প্রতিফলন। এক কথায় বলা যায় গঙ্গাসাগর তীর্থযাত্রা সংসার (জীবন, মৃত্যু ও যাপনের চক্র) থেকে নির্বাণ (মোক্ষ) প্রাপ্তির এক মহান সফর যা যুগ যুগ ধরে পণ্ডিত, লেখক, যুক্তিবাদী ও আধ্যাত্মবাদীদের বিস্মিত করেছে। গঙ্গাসাগর মেলার জনসমুদ্র আসলে মানুষের সেই আধ্যাত্মিক অনুসন্ধানের প্রমাণ।