গঙ্গাসাগর হিন্দু ধর্মের এক অত্যন্ত পবিত্র তীর্থস্থান যেখানে প্রতি বছর মকর সংক্রান্তির সময় সারা ভারতের লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী সাগরসঙ্গমের পবিত্র জলে ডুব দিয়ে মোক্ষপ্রাপ্তির আশায় একত্রিত হন। গঙ্গাসাগর মেলার সময় তীর্থ করতে আসা এই বিশাল সংখ্যক মানুষের আয়োজন করা পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও জেলা প্রশাসনের পক্ষে খুবই দুরূহ কাজ। তাই তীর্থযাত্রীদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিতে প্রশাসনের তরফ থেকে বেশ কিছু নতুন উদ্যোগ শুরু করা হচ্ছে।
বিগত ২ বছরে সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীর কাছে ই - স্নান উদ্যোগ অত্যন্ত প্রিয় হয়ে ওঠার পর, ২০২২ সালে ই- পূজা উদ্যোগ চালু হয়। দূরে থাকা ভক্তদের মনের ইচ্ছাপূরণ করতে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা প্রশাসন এই অসামান্য উদ্যোগটি শুরু করে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ভক্তরা ঘরে বসে সরাসরি কপিল মুনির আশ্রমের পূজা ও মহাপ্রসাদ পেতে পারেন। ঘরে বসে এই অনবদ্য প্রাপ্তির জন্য গঙ্গাসাগরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে ই-পূজা পেজে যান ও নিজের নাম ও গোত্র সহ একটি ই-পূজা বুক করুন এবং একটি নুন্যতম মূল্য প্রদান করুন। আপনার নামে বিশেষ ই-পূজা প্যাক যার মধ্যে থাকবে কপিল মুনির পূজার ফুল ও মহাপ্রসাদ সরাসরি পৌঁছে যাবে আপনার বাড়িতে। এই উদ্যোগ মূলত সারা বিশ্বের সেইসব পুণ্যার্থীদের জন্য যারা ইচ্ছা থাকলেও বিভিন্ন অসুবিধার কারণে এই মহামেলায় অংশগ্রহণ করতে পারেন না। আরো পড়ুন
গঙ্গাসাগর শুধুমাত্র পৌরানিক নয় এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান। শুধুমাত্র পৌরাণিক কাহিনী সম্পর্কে জেনে এই স্থানে পৌঁছনো উঠতি প্রজন্মের জন্য উচিত নয়, বরং তাদের এই তীর্থস্থানের ইতিহাসও জানা উচিত। সাগর তীর্থযাত্রীদের কাছে সেই মহান ঐতিহ্যের ইতিহাস তুলে ধরতে জেলা প্রশাসন নির্মাণ করেছে সাগর সংগ্রহালয়। তীর্থযাত্রীদের কাছে এটি একটি সুযোগ যেখানে তারা গঙ্গাসাগরের হাজার বছরের প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবেন। এই সংগ্রহশালাটি গঙ্গাসাগরে আগত সমস্ত তীর্থযাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সাগর সংগ্রহালয়ে ঐতিহাসিক এবং পৌরাণিক সমস্ত ঘটনা এমন সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে সংকলন করা হয়েছে যাতে তীর্থযাত্রীদের মনে এই স্মৃতি চিরস্থায়ী হয়ে থাকে এবং ভবিষ্যতে যেন তারা আবারও ফিরে আসেন এই পবিত্র তীরভূমি দর্শনে। আরো পড়ুন
গঙ্গাসাগর এক মহান পবিত্র তীর্থস্থান যেখানে প্রতি বছর মকর সংক্রান্তির সময় সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী মোক্ষ লাভের উদ্দেশ্যে এসে উপস্থিত হন। তাদের ইচ্ছা হতেই পারে এই তীর্থস্থানের কিছু স্মৃতি সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার। পুণ্যার্থীদের এই মনের ইচ্ছা পূরন করতেই এই বছর জেলা প্রশাসনের নতুন উদ্যোগ ‘বন্ধন’। এমন এক উদ্যোগ যা তীর্থযাত্রী ও প্রশাসনের মধ্যে এক সম্পর্ক স্থাপন করবে। ‘বন্ধন’ আসলে প্রশাসনের তরফ থেকে তীর্থযাত্রীদের প্রত্যেকের জন্য এক বিশেষ স্বীকৃতির ব্যবস্থা। মেলায় আগত প্রত্যেক তীর্থযাত্রীকে প্রশাসনের তরফ থেকে তার ছবি সহ এক বিশেষ শংসাপত্র প্রদান করা হবে। এই উদ্যোগকে সফল করতে মেলা প্রাঙ্গণে ক্যামেরা ও কাস্টমাইজড সফটওয়ার সহ ফটো বুথ স্থাপন করা হবে। গঙ্গাসাগর মেলায় আগত প্রত্যেক তীর্থযাত্রী এই শংসাপত্রটি নিজের মূল্যবান স্মৃতি হিসাবে আজীবন সংরক্ষণ করে রেখে দিতে পারবেন এবং প্রতিবছর এই মেলায় আসতে আগ্রহী হবেন। আরো পড়ুন
অতিমারী চলাকালীন বিভিন্ন প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা প্রশাসন মেলাকে বিশ্ব স্তরে পৌঁছে দেওয়ার কথা ভেবে এক অভাবনীয় উদ্যোগ শুরু করে। ২০২০ সালে কোভিড-১৯ যখন গোটা বিশ্বকে গৃহবন্দী করে ফেলেছিল তখন এই উদ্যোগ শুরু হয় এবং এই উদ্যোগ সর্বত্র সফল হয়। এই উদ্যোগ মানুষের ঘরে ঘরে গঙ্গাসাগরের পবিত্র জলে স্নানের অনুভূতি পৌঁছে দিয়েছিল। এই উদ্যোগের মাধ্যমে যে কোনও ভক্ত অনলাইন বুকিং-এর মাধ্যমে ঘরে বসে একটি প্যাকেজের মধ্যে পেয়ে যেতে পারে সাগর সঙ্গমের পবিত্র গঙ্গাজল, গঙ্গামাটি, প্রসাদ এবং একটি পুস্তিকা। আরো পড়ুন
আরতির মাধ্যমে মানুষ সকল প্রিয় জাগতিক বস্তুসমূহ সুন্দর ও প্রতীকীভাবে ঈশ্বরকে নিবেদন করে। এটি বৈদিক আগ্নেয় পদ্ধতিরই অংশ। অন্যান্য যেকোনও ধর্মীয় আচারের মত আরতি সর্বদাই গঙ্গাসাগর মেলার প্রাণস্পন্দন ছিল। যুগে যুগে অগণিত আচার- অনুষ্ঠানের সাক্ষী থেকেছে এই তীরভূমি। আরতি এমন এক মহা অনুষ্ঠান যা ধর্মীয় গণ্ডীর বাইরে সবাইকে একত্রিত করে। এই বছর এই ঐতিহ্যবাহী গঙ্গাআরতি এক নতুন রূপ পেতে চলেছে। জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে এক নতুন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এই বছর ৩ দিন - ১২, ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি ধরে আরতি অনুষ্ঠিত হবে। গঙ্গাসাগরের পবিত্র তীরভূমিতে ঢাকের শব্দে, শঙ্খ নাদে, পণ্ডিতদের বেদমন্ত্র ধ্বনিতে এবং লক্ষাধিক মানুষের প্রার্থনায় গঙ্গাসাগর হয়ে উঠবে ঐশ্বরিক। আরো পড়ুন
বাংলাকে চিরকালই ভক্তির পুণ্যক্ষেত্র বলা হয়ে থাকে। এখানে চিরকাল লক্ষ লক্ষ মানুষের ইচ্ছাপূরণ হয়েছে এবং বহু প্রার্থনা সফল হয়েছে। এই কারণেই বাংলায় সতীপীঠের ( দেবী সতীর দেহাংশ যে যে স্থানে পড়েছিল) ও শিবভূমির এত প্রাধান্য দেখা যায় এবং অসংখ্য ভক্তের আগমন হয়। এই বছর গঙ্গাসাগরে আগত লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রীদের সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা তীর্থগুলির মধ্যে অন্যতম প্রধান ৫টি তীর্থ দর্শনের সৌভাগ্য হবে। গঙ্গাসাগরে আগত পুণ্যার্থীরা কালীঘাট, দক্ষিণেশ্বর, তারাপীঠ, তারকেশ্বর ও জহুরা কালীবাড়ির মন্দিরগুলি দর্শন করতে পারবেন জেলা প্রশাসনের নতুন উদ্যোগ ‘বাংলার মন্দির’ -এ। মেলা প্রাঙ্গণে নির্মিত বিশাল ত্রিমাত্রিক মন্দিরগুলি হয়ে উঠবে আসল মন্দিরগুলির জীবন্ত প্রতীক। আরো পড়ুন
ভারত এক এমন দেশ যেখানে বিভিন্ন বৈচিত্র্যপূর্ন ধর্মীয় উৎসব পালিত হয়। তার মধ্যে অন্যতম হল গঙ্গাসাগর মেলা। এই বৈচিত্র্যপূর্ন মেলায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তীর্থযাত্রীরা মোক্ষের আশায় একত্রিত হন। মকর সংক্রান্তির সময় গঙ্গাসাগর এক সারা বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতির এক মেলবন্ধন হয়ে ওঠে। কোভিড-১৯ এর কারণে ভক্তরা এই তীর্থযাত্রা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন। সেই কারণেই প্রশাসন গ্রহণ করে এক অভাবনীয় উদ্যোগ যার নাম ই - দর্শন। এক এমন উদ্যোগ যা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ভক্তদের ঘরে বসে গঙ্গাসাগর দর্শনের সুযোগ করে দেয়। গঙ্গাসাগর ওয়েবসাইট এক বিশেষ ইন্টারাকটিভ ওয়েবসাইট যেটি মেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত সরাসরি সম্প্রচার করতে থাকবে। এছাড়াও এক বিশেষ সোশাল মিডিয়া পেজ মেলার সমস্ত কার্যক্রম ও স্মরণীয় মুহূর্তগুলি প্রচার করবে। আরো পড়ুন
গঙ্গাসাগরের মত প্রাচীন তীর্থস্থানে যেখানে মকর সংক্রান্তির সময় লক্ষ লক্ষ ভক্তের জমায়েত হয় সেখানে দুর্ঘটনারও সম্ভাবনা থেকেই যায়। তাই ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে সিসিটিভি নজরদারি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। সেই কারণে তীর্থযাত্রীদের চিহ্নিত করতে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মোট ১১৫০ টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। ২০ টি ড্রোন ব্যবহারের মাধ্যমে এবং জিপিএস নিয়ন্ত্রিত ভিড় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মাধ্যমে এক বিশেষ ইন্টিগ্রেটেড কন্ট্রোল রুম থেকে এই সমস্ত ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। নবান্নের কন্ট্রোল রুমেও লাইভ ফিড প্রেরণ করা হবে। আরো পড়ুন
গঙ্গাসাগর জীবনেরই রূপক। সুদূর তীর্থপথে বহু বাধা-বিঘ্ন আসে তীর্থযাত্রীদের সামনে। কিংবদন্তিগুলি বলে, অতীতে সাগরদ্বীপের যাত্রা অত্যন্ত বিপদজনক ও শারীরিক ভাবে কঠিন ছিল। ২০২২ সালে এসে, প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে এই মহান তীর্থভূমির পথে যাত্রা পিলগ্রিম ট্রান্সপোর্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (PTMS) ব্যবহারের মাধ্যমে এখন অনেক সহজ। জানুয়ারি মাসের শীতল কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে শূন্য দৃশ্যমানতা যুক্ত নৌ-পথগুলি PTMS দ্বারা চিহ্নিত করা হবে। সমস্ত জলযানের জিপিএস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বিশ্লেষণ করে ভিড় নিয়ন্ত্রণ আরও সহজ হবে। PTMS -এর জিপিএস ট্র্যাকিং ব্যবস্থার ফলে যাত্রীরা নিরাপদে সাগরদ্বীপে অবতরণ করবেন। আরো পড়ুন
যেকোনও তীর্থযাত্রায় পুণ্যার্থীদের জন্য সাধুসঙ্গ ও তাঁদের উপদেশ লাভ এক বিশেষ ভূমিকা রাখে। গঙ্গাসাগর মেলায় পুণ্যার্থীদের এই সুবিধা দিতেই দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ ’সাগর প্রবচন’। তীর্থযাত্রীরা এই সাগর প্রবচন কেন্দ্রে এসে উচ্চমার্গের সাধক ও সাধ্বীদের সহায়তায় ধ্যান করবার ও শাস্ত্রবাণী আত্মস্থ করবার এক বিরল সুযোগ লাভ করবেন যা তাদের তীর্থযাত্রাকে সফলতম করে তুলবে। আরো পড়ুন
মকর সংক্রান্তির সময় সারা ভারতের তীর্থযাত্রীরা গঙ্গাসাগরে আসেন। সেইসব তীর্থযাত্রী যাতে নিরুপদ্রবে তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন তার জন্য এখন গঙ্গাসাগরে ২৪/৭ মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযোগ, ৭টি ওয়াই-ফাই জোন, ওয়াই ফাই কলিং এবং ফ্রি কলিং জোন থাকছে যা পুণ্যার্থীদের নিশ্চিন্তে তীর্থভ্রমণে সহায়তা করবে। আরো পড়ুন
হিন্দু ধর্মে বলা হয়, মোক্ষ প্রাপ্তির জন্য ইহ জীবনে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করা আবশ্যক। কিন্তু মানুষ আত্মার শোধন করতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে গঙ্গাসাগর এলেও পরিবেশকে নিয়মিত দূষিত করতে থাকে। যার ফলাফল হল, ক্রমাগত দূষণ বৃদ্ধি এই গ্রহকে ধ্বংসের পথে নিয়ে চলেছে। সেই কারণেই দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা প্রশাসন সাগরে প্লাস্টিক ব্যবহার সম্পূর্ন বন্ধ করে এই মেলাকে সম্পূর্ণ পরিবেশ বান্ধব মেলা করবার শপথ গ্রহণ করেছে। প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মেলা প্রাঙ্গণে পরিবেশ বান্ধব পণ্য বিতরণ করা হবে। মেলা প্রাঙ্গণে নিয়মিতভাবে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালনো হবে। ১০,০০০ -এরও বেশি স্থায়ী ও অস্থায়ী শৌচালয় নির্মিত হয়েছে। ৭টি কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইউনিট কার্যকরী থাকবে। ৩০টি ই-কার্ট বর্জ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত হবে। মেলা প্রাঙ্গণ পরিচ্ছন্ন রাখবার জন্য, ঝাড় দিয়ে ও বর্জ্য অপসারণ করতে ৩০০০ কর্মী মোতায়েন করা হচ্ছে। মেলা প্রাঙ্গণ পরিষ্কার রাখতে প্রশাসন দৃড়প্রতিজ্ঞ। আরো পড়ুন