গঙ্গাসাগর হিন্দু ধর্মের এক অত্যন্ত পবিত্র তীর্থস্থান যেখানে প্রতি বছর মকর সংক্রান্তির সময় সারা ভারতের লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী সাগরসঙ্গমের পবিত্র জলে ডুব দিয়ে মোক্ষপ্রাপ্তির আশায় একত্রিত হন। গঙ্গাসাগর মেলার সময় তীর্থ করতে আসা এই বিশাল সংখ্যক মানুষের আয়োজন করা পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও জেলা প্রশাসনের পক্ষে খুবই দুরূহ কাজ। তাই তীর্থযাত্রীদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিতে প্রশাসনের তরফ থেকে বেশ কিছু নতুন উদ্যোগ শুরু করা হচ্ছে।
অতিমারী চলাকালীন বিভিন্ন প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা প্রশাসন মেলাকে বিশ্ব স্তরে পৌঁছে দেওয়ার কথা ভেবে এক অভাবনীয় উদ্যোগ শুরু করে। ২০২০ সালে কোভিড-১৯ যখন গোটা বিশ্বকে গৃহবন্দী করে ফেলেছিল তখন এই উদ্যোগ শুরু হয় এবং এই উদ্যোগ সর্বত্র সফল হয়। এই উদ্যোগ মানুষের ঘরে ঘরে গঙ্গাসাগরের পবিত্র জলে স্নানের অনুভূতি পৌঁছে দিয়েছিল। এই উদ্যোগের মাধ্যমে যে কোনও ভক্ত অনলাইন বুকিং-এর মাধ্যমে ঘরে বসে একটি প্যাকেজের মধ্যে পেয়ে যেতে পারে সাগর সঙ্গমের পবিত্র গঙ্গাজল, গঙ্গামাটি, প্রসাদ এবং একটি পুস্তিকা। আরো পড়ুন
আরতির মাধ্যমে মানুষ সকল প্রিয় জাগতিক বস্তুসমূহ সুন্দর ও প্রতীকীভাবে ঈশ্বরকে নিবেদন করে। এটি বৈদিক আগ্নেয় পদ্ধতিরই অংশ। অন্যান্য যেকোনও ধর্মীয় আচারের মত আরতি সর্বদাই গঙ্গাসাগর মেলার প্রাণস্পন্দন ছিল। যুগে যুগে অগণিত আচার- অনুষ্ঠানের সাক্ষী থেকেছে এই তীরভূমি। আরতি এমন এক মহা অনুষ্ঠান যা ধর্মীয় গণ্ডীর বাইরে সবাইকে একত্রিত করে। এই বছর এই ঐতিহ্যবাহী গঙ্গাআরতি এক নতুন রূপ পেতে চলেছে। জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে এক নতুন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এই বছর ৩ দিন - ১২, ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি ধরে আরতি অনুষ্ঠিত হবে। গঙ্গাসাগরের পবিত্র তীরভূমিতে ঢাকের শব্দে, শঙ্খ নাদে, পণ্ডিতদের বেদমন্ত্র ধ্বনিতে এবং লক্ষাধিক মানুষের প্রার্থনায় গঙ্গাসাগর হয়ে উঠবে ঐশ্বরিক। আরো পড়ুন
গঙ্গাসাগর জীবনেরই রূপক। সুদূর তীর্থপথে বহু বাধা-বিঘ্ন আসে তীর্থযাত্রীদের সামনে। কিংবদন্তিগুলি বলে, অতীতে সাগরদ্বীপের যাত্রা অত্যন্ত বিপদজনক ও শারীরিক ভাবে কঠিন ছিল। ২০২২ সালে এসে, প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে এই মহান তীর্থভূমির পথে যাত্রা পিলগ্রিম ট্রান্সপোর্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (PTMS) ব্যবহারের মাধ্যমে এখন অনেক সহজ। জানুয়ারি মাসের শীতল কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে শূন্য দৃশ্যমানতা যুক্ত নৌ-পথগুলি PTMS দ্বারা চিহ্নিত করা হবে। সমস্ত জলযানের জিপিএস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বিশ্লেষণ করে ভিড় নিয়ন্ত্রণ আরও সহজ হবে। PTMS -এর জিপিএস ট্র্যাকিং ব্যবস্থার ফলে যাত্রীরা নিরাপদে সাগরদ্বীপে অবতরণ করবেন। আরো পড়ুন
ভারত এক এমন দেশ যেখানে বিভিন্ন বৈচিত্র্যপূর্ন ধর্মীয় উৎসব পালিত হয়। তার মধ্যে অন্যতম হল গঙ্গাসাগর মেলা। এই বৈচিত্র্যপূর্ন মেলায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তীর্থযাত্রীরা মোক্ষের আশায় একত্রিত হন। মকর সংক্রান্তির সময় গঙ্গাসাগর এক সারা বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতির এক মেলবন্ধন হয়ে ওঠে। কোভিড-১৯ এর কারণে ভক্তরা এই তীর্থযাত্রা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন। সেই কারণেই প্রশাসন গ্রহণ করে এক অভাবনীয় উদ্যোগ যার নাম ই - দর্শন। এক এমন উদ্যোগ যা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ভক্তদের ঘরে বসে গঙ্গাসাগর দর্শনের সুযোগ করে দেয়। গঙ্গাসাগর ওয়েবসাইট এক বিশেষ ইন্টারাকটিভ ওয়েবসাইট যেটি মেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত সরাসরি সম্প্রচার করতে থাকবে। এছাড়াও এক বিশেষ সোশাল মিডিয়া পেজ মেলার সমস্ত কার্যক্রম ও স্মরণীয় মুহূর্তগুলি প্রচার করবে। আরো পড়ুন
গঙ্গাসাগরের মত প্রাচীন তীর্থস্থানে যেখানে মকর সংক্রান্তির সময় লক্ষ লক্ষ ভক্তের জমায়েত হয় সেখানে দুর্ঘটনারও সম্ভাবনা থেকেই যায়। তাই ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে সিসিটিভি নজরদারি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। সেই কারণে তীর্থযাত্রীদের চিহ্নিত করতে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মোট ১১৫০ টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। ২০ টি ড্রোন ব্যবহারের মাধ্যমে এবং জিপিএস নিয়ন্ত্রিত ভিড় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মাধ্যমে এক বিশেষ ইন্টিগ্রেটেড কন্ট্রোল রুম থেকে এই সমস্ত ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। নবান্নের কন্ট্রোল রুমেও লাইভ ফিড প্রেরণ করা হবে। আরো পড়ুন
হিন্দু ধর্মে বলা হয়, মোক্ষ প্রাপ্তির জন্য ইহ জীবনে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করা আবশ্যক। কিন্তু মানুষ আত্মার শোধন করতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে গঙ্গাসাগর এলেও পরিবেশকে নিয়মিত দূষিত করতে থাকে। যার ফলাফল হল, ক্রমাগত দূষণ বৃদ্ধি এই গ্রহকে ধ্বংসের পথে নিয়ে চলেছে। সেই কারণেই দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা প্রশাসন সাগরে প্লাস্টিক ব্যবহার সম্পূর্ন বন্ধ করে এই মেলাকে সম্পূর্ণ পরিবেশ বান্ধব মেলা করবার শপথ গ্রহণ করেছে। প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মেলা প্রাঙ্গণে পরিবেশ বান্ধব পণ্য বিতরণ করা হবে। মেলা প্রাঙ্গণে নিয়মিতভাবে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালনো হবে। ১০,০০০ -এরও বেশি স্থায়ী ও অস্থায়ী শৌচালয় নির্মিত হয়েছে। ৭টি কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইউনিট কার্যকরী থাকবে। ৩০টি ই-কার্ট বর্জ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত হবে। মেলা প্রাঙ্গণ পরিচ্ছন্ন রাখবার জন্য, ঝাড় দিয়ে ও বর্জ্য অপসারণ করতে ৩০০০ কর্মী মোতায়েন করা হচ্ছে। মেলা প্রাঙ্গণ পরিষ্কার রাখতে প্রশাসন দৃড়প্রতিজ্ঞ। আরো পড়ুন
যেকোনও তীর্থযাত্রায় পুণ্যার্থীদের জন্য সাধুসঙ্গ ও তাঁদের উপদেশ লাভ এক বিশেষ ভূমিকা রাখে। গঙ্গাসাগর মেলায় পুণ্যার্থীদের এই সুবিধা দিতেই দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ ’সাগর প্রবচন’। তীর্থযাত্রীরা এই সাগর প্রবচন কেন্দ্রে এসে উচ্চমার্গের সাধক ও সাধ্বীদের সহায়তায় ধ্যান করবার ও শাস্ত্রবাণী আত্মস্থ করবার এক বিরল সুযোগ লাভ করবেন যা তাদের তীর্থযাত্রাকে সফলতম করে তুলবে। আরো পড়ুন
মকর সংক্রান্তির সময় সারা ভারতের তীর্থযাত্রীরা গঙ্গাসাগরে আসেন। সেইসব তীর্থযাত্রী যাতে নিরুপদ্রবে তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন তার জন্য এখন গঙ্গাসাগরে ২৪/৭ মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযোগ, ৭টি ওয়াই-ফাই জোন, ওয়াই ফাই কলিং এবং ফ্রি কলিং জোন থাকছে যা পুণ্যার্থীদের নিশ্চিন্তে তীর্থভ্রমণে সহায়তা করবে। আরো পড়ুন
ইউনিক এবং ইউনিভার্সাল QR কোড ব্র্যান্ড করা হবে এবং মেলা গ্রাউন্ডের প্রতিটি কোণে স্থাপন করা হবে। মোবাইলের মাধ্যমে কোড স্ক্যান করলে, তীর্থযাত্রীরা পানীয় জল, এটিএম, টয়লেট, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, রেলওয়ে স্টেশন, মে আই হেল্প ইউ কিয়স্ক এবং আরও অনেক কিছুর মতো পছন্দসই সুবিধাগুলি দেখতে এবং নেভিগেট করতে পারেন। প্রদর্শিত বিষয়বস্তু ইংরেজি এবং আঞ্চলিক ভাষায়। আরো পড়ুন